শফিউল আলম, চকরিয়া :
ক্লাসের পড়া না হলেও নেই শিক্ষকের বকুনির ভয়। নেই পড়া-লেখার কোন একঘেঁয়েমি। তাই তো ইচ্ছা হলে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট এসব শিশুরা মেতে ওঠে হাসি-আনন্দ, খেলাধুলা আর নাচ-গানে।
এ যেন বিদ্যালয়ের চিরায়ত ধারণা ছাপিয়ে এটি একটি পরিবার, একটি সমাজ, একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের মনে।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধারণা পাল্টে দেওয়া অন্যরকম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কোনো সরকারি বা এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়।বলছি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে ০৮নং ওয়ার্ডে প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা “বৃন্দাবনখীল প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামের অনন্য এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা।এই বৃন্দাবনখীল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার আলো বিলিয়ে চলেছেন আলোর দিশারী হয়ে ওঠা শিক্ষানুরাগী জয়নাল আবেদীন ও ফরিদা ইয়াসমিন নামে দুই ব্যক্তি।প্রত্যন্ত অজপাড়া গায়ের অবহেলিত দরিদ্র শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ও পড়াশুনায় আগ্রহ বাড়াতে ২০১১ সাল থেকে ব্যতিক্রম এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তারা।বিদ্যালয়টির সবচেয়ে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য এখানে পড়াশুনা হয় শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী। নেই প্রচলিত গৎবাঁধা সময়সূচি, শিক্ষকের গাম্ভীর্য ও নিয়মের সাত-পাঁচ। এখানকার সব শিশুরাই নিজেদের রাজ্যের রাজা। শিশুরা এখানে হেসে-খেলে শেখে নিজেদের পাঠ। পাশাপাশি তাদের দেওয়া হয় দেশপ্রেম ও সংস্কৃতির ধারণা।এ অঞ্চলের আলোর দিশারী হয়ে ওঠা ও বৃন্দাবনখীল প্রাথমিক বিদ্যালয় স্বপ্নদ্রষ্টা জয়নাল সামন্য একজন স্কুলের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী।সমাজে শিশুদের গৎবাঁধা নিয়মের পড়াশোনা ও জবরদস্তি তাকে ভাবাতো। একান্তে পড়ালেখাকে ছোট্ট শিশুদের কাছে খেলাধুলার মতন আনন্দদায়ক করে তোলার পথ খুঁজে ফিরতেন তিনি। অবশেষে নিজের মধ্যেই খুঁজে পান পথ ও পাথেয়। তার হাতে গড়ে ওঠা বৃন্দাবনখীল প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন এক আলোকবর্তিকার নাম।
যেভাবে পথচলা শুরু
কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বৃন্দাবনখীল। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ।আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ২০১১ সালে বৃন্দাবনখীল গ্রামের ফরিদা ইয়াসমিনের দান (পাহাড়ী বনভুমি) করা জায়গায় ৫০ জন শিশুকে নিয়ে শুরু করেন ‘বৃন্দাবনখীল প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা।
বর্তমান অবস্থা
গত ছয় বছরে জয়নাল ও ফরিদার অনেক প্রতিকুল অবস্থা গেছে। তবে তাতে একটু দমে যাননি তারা। গ্রামের মানুষের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে তাদের কাজ।অল্প পরিমান জমিতে টিনশেডের ঘর বেঁধে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম। ৫০ জন শিশুকে শুরু করা শিশু শ্রেণির বিদ্যালয়টি ছয় বছরে পেরিয়ে এখন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার বিদ্যালয়য়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ২৫০ জন।জয়নাল আবেদীন বলেন- উত্তর হারবাং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমদের সহযোগিতায় প্রতি বছর বিনা মূল্যে বই সংগ্রহ করি উপজেলা থেকে। বই পেলেও স্কুলটি পাহাড়ের উপর হওয়ার প্রতি বর্ষাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।গেল ঝড়ে স্কুল ঘর ব্যপক ভাবে ক্ষতি হয় । এখন মেরামত করার মত টাকা আমাদের বা পাড়া প্রতিবেশীদের নেই কারণ এলাকার সবাই গরিব ও অসহায় আর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সহায়তার জন্য আবেদন করেছি কিন্তু কোন প্রকার সহযোগিতা এখনো পায়নি, সরকার বা কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্টান আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে এই অবেহেলীত অজপাড়া গাঁয়ের স্কুলটি সমাজে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।